রোগপ্রতিরোধে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর প্রাকৃতিক ভেষজ

করোনা পরিস্থিতিতে এখন সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যার যার কর্মস্থলে ফিরে এসে কাজ করছেন। এ পরিস্থিতিতে সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। আমাদের উচিত রোগপ্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া এবং এ জন্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেসব খাবার বেশি বেশি খাওয়া। অধিকাংশ মানুষের ধারণা বেশি খাবার খেলে ওজন বাড়ে। কিন্তু রোগপ্রতিরোধে ও ওজন কমানোর খাবার যে প্রচুর রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এমন অনেক ভেষজ খাবার আছে যা রোগপ্রতিরোধে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চলুন তেমন কয়েকটা খাবার সম্পর্কে জেনে নিই-

আপেল সিডার ভিনেগার

আপেল সিডার কোলেস্টেরল কমায়। ২০০৬ সালে জাপানের এক গবেষণাতে দেখা যায়, ভিনেগার এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। আধা আউন্স আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সেবন কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

আপেল সিডার ভিনেগার আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করে, মেটাবলিজম বাড়ায়। এক টেবিল চামচ পরিমাণ অ্যাপেল চিডার ভিনেগারে ১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১.২ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১০.৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আছে, কোনো প্রকার চর্বি ও আমিষ নেই।

বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্ব প্রদান করেন যে, এটি স্টার্চকে পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্তপ্রবাহে ক্যালোরির পরিমান কম হয়। যখনি কোন ব্যায়াম বা জিম করার পর পেশিগুলোতে শক্তির প্রয়োজন পরে বা অতিরিক্ত পরিশ্রম এর পর যখন শক্তি চাহিদা বেড়ে যায় তখন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শক্তির সঞ্চয় করে, এতে রয়েছে পটাসিয়াম ও বিভিন্ন রকম এনজাইম যা দুর্বলতা থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিদিন তাই পরিমিত পরিমাণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে দেহের ওজম কমে, চর্বি কাটে।

রেমেডি জুস

রেমেডি জুস এমন এক ধরনের জুস যা নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে অনায়াসে ওজন কমাতে পারবেন। ওজন হ্রাস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল জনিত রোগের ভেষজ সমাধান হিসাবে পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি অর্জনকারী ভেষজ জুস (রসুন, আদা, লেবু, আপেল সাইডার ভিনেগার এবং মধু) হল এই রেমিডি জুস। যেকোন ধরনের কৃত্রিম রং বা প্রিজার্ভেটিভ মুক্ত ভেষজ জুস হল এটি যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলজনিত রোগের জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করছে।

গ্রিন টি

আমাদের দেশে গ্রিন টি বা সবুজ চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চা-গাছের সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি প্রস্তুত করা হয়। এর রং হালকা হলদে সবুজ। এই চায়ে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে।

গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের মেদ কোষে বেশি শর্করা ঢুকতে পারে না। ফলে এই চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

চীনের একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে, গ্রিন টিতে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ মানুষের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়ের স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন ১ কাপ গ্রীন টি খান তদের তুলনায় যারা প্রতিদিন ৫ কাপ গ্রীন টি খান তাদের হার্ট অনেক বেশি সুস্থ। তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ হবার সম্ভাবনা খুবই কম। এছাড়াও শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে ও হার্টকে স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে।

মধু

প্রাচীন কাল থেকেই মধুর ব্যবহার দেশে ব্যাপক মাত্রায় হয়ে আসছে। অনেকেই গরম পানির সঙ্গে মধু, চায়ের সঙ্গে মধু ইত্যাদি নিয়মে নিয়মিত মধু খেয়ে থাকেন। তার উপকারিতা বা সুফলও পান। মধুতে জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে (যেমন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড)। তাই ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারি। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানে খেতে হবে।

প্রাকৃতিক মধুতে রয়েছে দারুণ খাদ্যগুণ। মধুতে রয়েছে ৪৫টিরও বেশি খাদ্যগুণ। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। শরীরের ভেতরে বাইরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রতিরোধকারী শক্তি গড়ে তোলে, যেকোনো সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মেদ কমে যায়।

প্রোবায়োটিকস

আমাদের শরীরে নানারকম জীবাণু বাস করে। এদের প্রোবায়োটিক বলা হয়। এরা ব্যাকটেরিয়া কিংবা ইস্ট। শরীরে যেসকল জীবাণু থাকে, তাদের সবাই কিন্তু আমাদের ক্ষতি করে না। কিছু জীবাণু আমাদের বন্ধু। পাকস্থলীতে হাজার হাজার কোটি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। দরকারি ব্যাকটেরিয়াগুলো হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এর ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে।

খুব সহজে প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার খেতে হলে দই ও আইসক্রিম খাওয়া যেতে পারে। আর যদি হাতের কাছে এই দু’টোর কোনেটাই না থাকে তা হলে এক গ্লাস দুধই যথেষ্ট।

আচারের মতো যেসব খাবার দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয় এবং দুধ ও লাচ্ছির মতো যেসব খাবার ফেনায়িত হয়, তাতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকে। টক দই, চিজ, আচার, ডার্ক চকোলেট ইত্যাদি খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।